বরগুনা প্রতিবেদক ॥ জ্যৈষ্ঠ আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন এই পাঁচ মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় নদ-নদীতে দেখা মিলছে না ইলিশের। ইলিশ ধরা না পরায় উপকূলের জেলে পরিবার অভাব অনটনে চরম হতাশার মধ্যে দিন পার করছে। হাহাকার চলছে উপকূলের জেলে পল্লীগুলোতে। জানা যায়, বঙ্গোপসাগর, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ইলিশকে ঘিরেই এখানকার জেলেদের জীবন ও জীবিকার চাকা ঘুরছে। ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও দেখা নেই রূপালি ইলিশের।
অপরদিকে বৈরী আবহাওয়া থাকায় জেলেরা সাগরে ঠিকমতো মাছ ধরতে পারছেন না। সাগর কিংবা নদীতে জাল ফেলে দু-একটা ইলিশের দেখা পেলেও তা হয়তো পরিবারের আহারেই চলে যায়। ইলিশ ধরা না পড়ায় অভাব-অনটনে ঋণ করে চলছে জেলেদের সংসার। এনজিওর লোন আর মহাজনের দাদনের ভাবনাই যেন জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, ঘাটে নোঙর করে আছে জেলেদের শতাধিক ট্রলার, বাজারে নেই ইলিশ। অলস সময় পার করছেন আড়ৎদাররা। দু-এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও নেই হাঁকডাক। বছরের এ ভরা মৌসুমে জেলেরা মহোৎসবে রূপালি ইলিশ ধরেন, ট্রলার ভর্তি মাছ আসে অবতরণ কেন্দ্র। মাছ রাখতেই শুরু হয় হাঁক-ডাক। অবতরণ এলাকায় থাকে ক্রয়-বিক্রয়ের সরগরম। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। শনিবার সরেজমিনে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও প্রকৃতির নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে। দুর্যোগপূর্ণ আবাওয়ার কারণে সাগরে ট্রলারগুলো যাওয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সিগনাল ও সাগর উত্তাল থাকায় ১৫ দিন ধরে ঘাটে বসে অলস সমায় পার করছে।
নদী ও সমুদ্রে ইলিশ ধরতে না পড়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। ছোট ছোট ট্রলারে ফাঁকে ফাঁকে দিন-রাত জাল ফেলে যে কয়টি মাছ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে ট্রলারের তেল খরচও হয় না। জেলেরা আরও জানান, অনেকে এনজিও ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ইলিশ বিক্রির টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবেন। কিন্তু ইলিশ ধরা না পড়ায় দেনাও শোধ করতে পারছেন না। উপজেলার পদ্মা এলাকার জেলে কবির হোসেন জানান, এবার সাগরে মাছের দেখা মেলেনি। যে মাছ পেয়েছেন তাতে খরচের টাকা ওঠেনি। এতে দৈনিক খরচের তুলনায় আয় না হওয়ায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। তাছাড়া বিনিয়োগ করে লোকসান গুনছেন আড়ৎদার ও দাদন ব্যবসায়ীসহ এর সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর বৈশাখ থেকে ইলিশ ধরা শুরু হলেও এ বছর ভরা মৌসুমে দুমাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষেও সমুদ্রে ইলিশের মাছের দেখা মিলছে না। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, যে কোনো কারণে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এটা সাময়িক, কিছু দিনের মধ্যে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আমার বিশ্বাস। পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা গভীর সমুদ্রে যেতে পারছেন না। যে কারণে মনে হয় তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আমরা আশা করি খুব অচিরেই রূপালি ইলিশ ধরা পড়বে।
Leave a Reply